By: Admin
Jul 2, 2024

 চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ  চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে প্রতিপক্ষের গুলি, বোমা ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে আওয়ামী লীগের দুই নেতা আবদুস সালাম (৪৮) ও আবদুল মতিনকে (৪২) হত্যাকান্ডের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব। এই দুই কারণেই প্রায় ৩০ বছর ধরে শিবগঞ্জ পৌরসভার মর্দানা ও নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নে চলছে একের পর এক হত্যাকান্ড ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম। ওই দুই এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ জন হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। ফলে ওই দুই এলাকায় সব সময় আতঙ্কই বিরাজ করে। যদিও প্রশাসন আশ^স্ত করেই চলেছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৭জুন’২৪) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার রাণীহাটি ডিগ্রি কলেজের সামনে গুচ্ছগ্রামের পাশে হত্যাকান্ডের শিকার জেলা পরিষদ সদস্য, নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মোড়লপাড়া গ্রামের মৃত এন্তাজ আলীর ছেলে আবদুস সালাম এবং নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য, হরিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও ফতেপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে আবদুল মতিন। মূল কারণ হলো- গত ১৪ মাস আগে নয়ালাভাঙ্গা ইউপি সদস্য ও স্থানীয় বিএনপি নেতা আলম ঝাপড়া খুন হন। ওই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন নিহত আবদুস সালাম এবং আলম ঝাপড়ার সাথে নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আশরাফুল ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক ছিল। এর আগে আলম হত্যা মামলার আরেক আসামি দুরুল হোদাকেও একই কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় ও নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করে ভবিষ্যতে পথ পরিস্কার করতেই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একটি গ্রæপের ছত্র ছায়ায় আশরাফুল হকের হুকুমে একের পর এক ঘটনা ঘটলেও তিনি থাকছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। আবদুস সালাম ও আবদুল মতিনের হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী আবদুর রহিম বাদশা জানান, নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হকের হুকুমেই তার বাহিনী এ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছেন। আবদুস সালামের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি নেতা আশরাফুলের বিপক্ষে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাকুল ইসলাম পিন্টু। তার প্রচারণা ও সহযোগিতায় ছিলেন আবদুস সালাম। মূলত ওই নির্বাচনসহ এলাকায় আধিপত্য বিরোধের জেরেই আমার স্বামী ও আবদুল মতিনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সালামের ভাতিজি রুনা খাতুন অভিযোগ করেন, সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ আলীর নেতৃত্বে তার চাচা ও সহযোগীদের ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এর আগেও দুই দফা তারা হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু প্রাণে বেঁচে যান। প্রশাসনের তৎপরতা থাকলে হয়তো তার চাচাকে প্রাণ দিতে হতো না। আবদুস সালামের চাচি রাহেলা বেগম অভিযোগ করেন, আশরাফ আলীর সন্ত্রাসীরা তার ভাতিজাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এজন্য তিনি আশরাফ আলীর ফাঁসি দাবি করেন। এদিকে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া মতিনের ছেলে মশিউর রহমান (১৯) বলেন, তার বাবা কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। পাওনা টাকা শোধ দেওয়ার জন্য সালাম ডেকেছিলেন বলে গিয়েছিলেন তার সঙ্গে দেখা করতে। মশিউর বলেন, আমি বাবা হত্যার বিচার চাই। কিন্তু মামলা করতে ভয় পাচ্ছি। যদি আমাকেও মেরে ফেলে সন্ত্রাসীরা। আমিই একমাত্র ছেলে। পঞ্চম শ্রেণি পড়–য়া আমার এক বোন আছে। আমার কিছু হলে মা কাকে অবলম্বন করে বাঁচবে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আমার জাপান যাওয়ার কথা। এর মধ্যে জাপানি ভাষা শিখেছি। ৭ জুলাই ঢাকায় পরীক্ষা। এখন সবকিছু অনিশ্চিত। স্থানীয় বাসিন্দা, একাধিক রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের একই অভিযোগ করে বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক দ্ব›েদ্ব হত্যাকান্ডের নেপথ্য কারণ। এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা আছে এমনটিও বলছেন কেউ কেউ। আশরাফুল হক ১৯৮৯ সাল থেকে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় মরিয়া। তিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ার পর এলাকায় আধিপত্যের সংঘাত আরও বেড়ে যায়। রাজনৈতিক বিরোধের কারণে নয়ালাভাঙ্গায় রক্ত ঝরছেই। জনপ্রতিনিধি কিংবা সাধারণ মানুষ কেউ নিরাপদ নয়। যারা আশরাফের বিরোধিতা করেছেন আব্দুস সালামের মতো তাদের সবাইকে লাশ হতে হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, আশরাফুল হক একটি আতঙ্কের নাম। গত তিন দশকে অসংখ্য হত্যার মূল নায়ক হলেও তিনি থেকে যাচ্ছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বোমা বাহিনী। যারা সবাই বোমা তৈরি করতে পারেন। এখন আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেই আশরাফুলের গভীর সখ্যতা রয়েছে। আধিপত্যকে ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলেন। তাদের সুপারিশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বড় বড় ঠিকাদারি কাজও পান তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, জেলাব্যাপি আওয়ামী লীগের দুটি গ্রæপের দ্ব›দ্ব চরম আকার ধারণ করায়, সুবিধাবাদী বিএনপি নেতা আশরাফুল হক ও তার বাহিনী কৌশলে একটি গ্রæপের আশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি সামনে আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে বলে আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের পিসিপিআরে আশরাফুলের বিরুদ্ধে ২১টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১২টি বিস্ফোরক আইনে, দুটি হত্যা, তিনটি ছিনতাই, দুটি প্রতারণা, একটি মাদক ও আইনশৃঙ্খলা বিঘœ ঘটানোর অপরাধে দ্রæত বিচার আইনেও মামলা রয়েছে তার নামে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১২ এপ্রিল খুন হন ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা আলম হোসেন ঝাপড়া। পরাজিত ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আঙ্গুর বাহিনী তাকে খুন করে বলে অভিযোগ ওঠে। গত বছরের ২৫ জুলাই আলম হত্যা মামলার আসামি দুরুল হোদাকে আশরাফুলের হুকুমে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু কৌশলে এই হত্যাকান্ডের কয়েকদিন আগেই আশরাফুল হক একটি বিস্ফোরক মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, গত ১০-১২ বছরে ওই এলাকায় প্রায় ১০ জন খুন হয়েছে এবং হাজার হাজার বোমা ও ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, দুরুল হত্যার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সালামকে টার্গেট করে আশরাফ বাহিনী। গত ২৫ মার্চ রাতে তার গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টা করে। ওই গাড়িটিতে পরপর ১০টি ককটেল নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীরা। তবে সেবার প্রাণে বেঁচে যান তিনি। শিবগঞ্জ থানার ওসি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নয়লাভাঙ্গা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রæপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। আবদুস সালাম একপক্ষের নেতৃত্ব দিতেন। এ বিরোধের জেরে তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। প্রধান আসামি আশরাফুল হকের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আম্বিয়া (৪৮) ও ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক (৫২) কে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সুপার ছাইদুল হাসান জানান, সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হকের লোকজন এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, আশরাফুলের গ্রæপ সম্পর্কে জেনেছি। সকল তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।#

 


Create Account



Log In Your Account