চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের ঠুঠাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সায়েমা খাতুন। বয়স প্রায় ৩০। একযুগ আগে বড় বোন রজিনা বেগম মারা যাওয়ার পর তিন সন্তানসহ দুলাভাই নুহু আলীকে বিয়ে করে সংসারের হাল ধরেছিলেন তিনি। সংসারটি তাদের ভালোই চলছিল । সায়েমা খাতুন হঠাৎ জানতে পারে যে,গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বংশীয় রেষারেষিতে স্বামী নুহু আলীকে রাস্তায় ফেলে কুপিয়েছে প্রতিপক্ষরা। ছবিতে স্বামীর মুখে আঘাতের চিহ্ন দেখে রাত কাটিয়েছেন সেই থেকে ঘুমাতে পারেননি এই গৃহবধু।গত শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে থাকা অবস্থায় মারা যান তার স্বামী নুহু আলী। নিহত নুহু আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের ঠুঠাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।এতে আকাশ ভেঙে পড়ে সায়েমার মাথায়। বোনের তিন সন্তান আর নিজে জন্ম দিয়েছেন আরও তিনটি সন্তান। সায়েমা এখন ছয়টি সন্তান নিয়ে পাগলপ্রায় । বুধবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের ঠুঠাপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে থমথমে পরিবেশ। স্থানে স্থানে বসেছে পুলিশি পাহারা। আর ছয় সন্তান পাশে নিয়ে কাঁদছেন সায়েমা। সায়েমা খাতুন বলেন, আমার বড় বোন মারা যাওয়ার পর পারিবারিকভাবে দুলাভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় আমার। তখন থেকে আমার বোনের তিন সন্তানকে মায়ের অভাব বুঝতে দিইনি। পরে আমার আরও তিনটি সন্তান হয়। এই ছয় সন্তান নিয়ে ভালোই চলছিল আমার সংসার। কিন্তু আমার স্বামী নির্দোষ হয়েও অন্যের ঝামেলায় প্রাণ দিতে হলো। এখন আমি এই ছয় সন্তান নিয়ে কোথায় যাবো? আর আমার স্বামীকে ছাড়া আমি বাঁচবোইবা কীভাবে।সায়েমা আরও বলেন, আমার স্বামী কোনোদিন কাউকে কটু কথা বলেনি। এলাকাবাসী সবাই জানে আমার স্বামীর ব্যবহার সম্পর্কে। কিন্তু এই নির্দোষ মানুষটাকে কুপিয়ে মারলো তারা। আমি এই হত্যাকান্ডে সুষ্ঠু বিচার চাই।স্থানীয়রা জানান, বুধবার দুপুরে স্থানীয় ঠুঠা বংশ ও মিস্ত্রি বংশের লোকজনের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। এ সময় মাঠে কাজ করছিলেন নুহু আলী। ক্ষেত থেকে বাড়ি ফেরার পথে মিস্ত্রি বংশের লোকজন নুহু আলীকে কুপিয়ে একটি আম বাগানে ফেলে যায়। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। শনিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জান হোসেন বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।তিনি আরও বলেন, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি নুহু আলী এই বংশীয় ঝামেলায় জড়িত ছিলেন না। কিন্তু তিনি যেহেতু ঠুঠা বংশের, তাই মিস্ত্রি বংশের লোকজনের তাকে কুপিয়েছে।#