চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে উপজেলার শান্তিমোড়, বাতেন খাঁর মোড় ও সোনার মোড়ে নৌকা ও আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১ ফেব্রæয়ারি) দুপুর ২টার পর এই ঘটনা ঘটে।এসময় নৌকা প্রতীকের দুই কর্মী আহত হয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া শান্তিমোড়ের আপেল প্রতীকের দুইটি নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর করা হয়।এদিকে, বিকেল ৩টার দিকে সোনার মোড়ে জেলা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন ও নৌকার প্রার্থী আব্দুল ওদুদের কর্মী-সমর্থকরা ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করছেন। এছাড়াও সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের কৃষ্ণগোবিন্দপুর এলাকায় চারটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসময় একটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।নৌকার কর্মী আসলাম আলী বলেন, হঠাৎ করেই ভোটে পরাজয়ের আশঙ্কা দেখে আপেল প্রতীকের কর্মীরা আমাদের কয়েকজন কর্মীর ওপর হামলা করেছে।এদিকে, আপেল প্রতীকের কর্মী আব্দুল আজিম জানান, হঠাৎ আপেল প্রতীকের দুইটি অফিসে ভাঙচুর চালায় নৌকার কর্মীরা। এসময় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায় তারা।শাহীন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, নৌকার প্রার্থী আব্দুল ওদুদ ও আপেল প্রতীকের প্রার্থী সামিউল হক লিটনের কর্মী-সমর্থকরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আব্দুল ওদুদের কর্মীরা বাতেন খাঁ মোড় ও লিটনের কর্মী সমর্থকরা শান্তিমোড়ে অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। র্যাব-৫, সিপিসি-১ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রুহ-ফি-তাহমিন তৌকির বলেন, ভোটকেন্দ্রের সামনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র্যাব সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, বিছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে। এর আগে একই ভোটকেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী আব্দুল ওদুদের সমর্থকদের সঙ্গে আপেল প্রতীকের প্রার্থী সামিউল হক লিটনের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজার রহমান বলেন, তাঁদের কয়েকজন নেতা-কর্মী মোটরসাইকেলে মাঝপাড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় আপেল প্রতীকের সমর্থকেরা। এতে নবাবগঞ্জ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ চ্যাটার্জি আহত হন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ উপনির্বাচন দুই বিদ্রোহীর সমর্থিত ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছেন না আ.লীগ প্রার্থীর সমর্থকেরা রহনপুর এবি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের ভিড়। তবে সেখানে দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের দেখা যায়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার (আপেল প্রতীক) ও খুরশিদ আলম ওরফে বাচ্চুর (মাথাল প্রতীক) সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের প্রার্থী মু. জিয়াউর রহমানের কর্মী-সমর্থকেরা। এ অভিযোগ করেছেন ওই দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। বুধবার সকাল থেকে গোমস্তাপুর উপজেলার খয়রাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রহনপুর এবি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরে আপেল প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের দেখা যায়নি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রহনপুর স্টেশন বাজার এলাকায় আপেল প্রতীকের কর্মী মোস্তাক হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রহনপুর এবি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশেই অবস্থান করছিলাম। সেখানে নৌকার কর্মী-সমর্থকেরাও ছিলেন। হঠাৎ তাঁরা আমাদের মেরে তাড়িয়ে দেন। তাঁরা আমাদের কর্মীদের ধাক্কা দিয়ে লিফলেট কেড়ে নেন।’ বুধবার সকাল থেকে আপেল প্রতীকের প্রার্থী ও রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারকে মাঠে দেখা যায়নি। খোঁজ নিতে মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে গেলে তাঁর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তাঁর ছেলে আহসান উদ্দীন সরকার বলেন, তাঁর বাবা এখন অসুস্থ। তিনি এখন কিছুই বলবেন না।বাড়ির বাইরে মোহাম্মদ আলীর ভাগনে শফিউল আজম বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, প্রায় ৭০ শতাংশ কেন্দ্রে আপেল প্রতীকের ভোটারদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’মাথাল প্রতীকের প্রার্থী ও গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খুরশিদ আলম অভিযোগ করে বলেন, ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ও বড়গাছি এলাকার দুটি কেন্দ্র, গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তাঁর ভোটারদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা এর সঙ্গে জড়িত বলে তিনি দাবি করেন।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মু. জিয়াউর রহমান বলেন, তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা কাউকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেননি। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা এসব অভিযোগ তুলছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সর্বোচ্চ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।ভোটার উপস্থিতি কম সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১৮০টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, বেলা একটা পর্যন্ত এ আসনে ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন।দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রহনপুর এবি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম জানান, বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১৬ শতাংশ। এ কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা তিন হাজার।এর আগে খয়রবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে পুরুষ ও নারীদের ছোট লাইন দেখা গেছে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ফিরোজ আলী বলেন, ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩২৬টি। এ কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা ২ হাজার ৬৫০।#