চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার হুমায়ূনরেজা উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে ১৯৮২’র এস.এস.সি.ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘পুর্নমিলনী ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। হুমায়ূনরেজা উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে ৮২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন। মোহাঃ সাদেকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাঃ জিয়াউল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি শক্রবার বৈকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে নিজ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ‘পুর্নমিলনী ’২৫ উদযাপন করেন ১৯৮২’র এস.এস.সি.ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন অত্র বিদ্যালয়ের (অবসর) শিক্ষকগণ আলহাজ মোঃ নাজিম উদ্দিন (মাঃ),মোঃ আনারুল হক(মাঃ) ,মোঃ বজলার রহমান(মাঃ) ও অত্র বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাঃ শাহাবুদ্দীন। এসময় বক্তব্যে দেন আলহাজ মোঃ নাজিম উদ্দিন (মাঃ),মোঃ আনারুল হক(মাঃ) ,মোঃ বজলার রহমান(মাঃ)। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বক্তব্যে দেন মোহাঃ হারুন-অর রশিদ,মোসাঃ সেলিমা খাতুন,মোহাঃ ফারিকুল আলম,মোহাঃ শরিফ উদ্দিন,মোহাঃ আনারুল ইসলাম,মোহাঃ সাইফুর রহমান, ,গোলাম কিবরিয়া কিরণ,মোহাঃ আবু সুফিয়ান প্রমূখ।
প্রতিষ্ঠানটির ১৯৮২ ব্যাচের একমাত্র ছাত্রী মোসাঃ সেলিমা খাতুন বলেন,‘৪৩ বছর পর আমার প্রাণের বিদ্যাপিঠে আসলাম। পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হলো। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই যারা এই সুন্দর আয়োজনের সাথে যুক্ত আমরা যারা আছি। শিক্ষকদের ও সকল বন্ধুর উপস্থিতি আমাদের এই অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করেছে। উদ্যোক্তা, আয়োজক ও সকল অংশগ্রহণকারীদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে এর সদস্যরা সকলকে সাথে নিয়ে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।স্কুলজীবনের সেই সোনালী দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে সকলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেছে। এই মিলনমেলায় অনেক পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আর পিয়জনদের সঙ্গে কাটানো সেই অনন্য মুহূর্ত।
বক্তরা বলেন আমাদের মাঝে হয়ত কেহ মাষ্টার, কেহ ডাক্তার, কেহ পুলিশ, কেহ কৃষক, কেহ ব্যবসায়ী । তবে আমরা যে যাই হই না কেন দিন শেষে আমরা সবাই বন্ধুই। আবার আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা হয়ত জীবনে সফলতা আনতে পারেনি, তারাও কিন্তু আমাদের বন্ধু। আমরা প্রতিজ্ঞা করতে চাই যে, যেকোন বিপদে-আপদে আমরা বন্ধুরা একে অপরের পাশে থাকবো সবসময়। এসময় বন্ধুদের বক্তব্যে উদ্দ্যেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা ও পরামর্শমূলক বিভিন্ন কথা উঠে আসে ।
স্কুলজীবনের স্মৃতিচারণ‘করতে গিয়ে মোহাঃ হারুন-অর রশিদ বলেন, হুমায়ূনরেজা উচ্চ বিদ্যালয়’এর গর্বময় পথচলায় একে একে পেরিয়ে গেছে ৪৩টি বছর।এই বিদ্যালয়ের আঙিনায় কাটানো দিনগুলো সকলের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলোর মধ্যে একটি। আমরা এখানে শুধু পড়াশোনা করিনি, বরং শিখেছি নৈতিকতা, বন্ধুত্ব, সহমর্মিতা ও নেতৃত্বের গুণাবলী। প্রতিটি ক্লাসরুমের স্মৃতি, শিক্ষকদের স্নেহ, বন্ধুদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো সবকিছু আজও হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছে। গৌরবোজ্জ্বল ৪৩ বছর পর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে পুর্নমিলনী উৎসবের। প্রতিষ্ঠানটির ১৯৮২ ব্যাচের এস.এস.সি.ছাত্র ছিলাম আমরা।এই অনুষ্ঠান আমাকে নতুন করে ফিরিয়ে নিয়ে গেল স্কুল জীবনে।’ এ আনন্দের নাম দিতে পারবো না। শুধু বলতে পারি জীবনের জন্য এমন মিলনমেলা খুবই প্রয়োজন। আমাদের এই পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য শুধু আনন্দ উপভোগ করাই নয়, বরং একে অপরের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া, পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করা এবং নতুন কিছু পরিকল্পনা গড়ে তোলা। আমাদের উচিত, এই বন্ধনকে আরও দৃঢ় করা, যেন আগামী বছরগুলোতে আমরা আরও বড় পরিসরে এই আনন্দ ভাগ করে নিতে পারি।এই পুর্নমিলনী আমাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে এবং আমাদের স্মৃতিগুলোকে আরও উজ্জ্বল করবে। সময় বদলেছে, জীবনযাত্রা বদলেছে, কিন্তু সেই স্মৃতিগুলো আজও সকলের মনে জ্বলজ্বল করছে। এই আয়োজন যেন সেই পুরনো দিনগুলোর উষ্ণতা আবার ফিরিয়ে এনেছে।
আজকের এই দিনে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদেরকে। শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, দিকনির্দেশনা এবং ভালোবাসা ছাড়া আমরা আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম না। শিক্ষকেরা শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান দেননি, বরং জীবনের প্রতিটি বাঁকে আমাদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন।এই মূহুর্তে মনে পড়ছে সেই সব শিক্ষকদের ও বন্ধুদের আমাদের মাঝ থেকে শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষকসহ অনান্য সহকারি শিক্ষকদের ও বন্ধুদেরকে আমরা হারিয়েছি ।তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পুরনো সব বন্ধু আর সহপাঠীকে পরস্পর জড়িয়ে ধরে হয়েছেন আত্মহারা। হাতে হাত আর বুকে বুক মিলিয়ে করেছেন কুশলবিনিময়। অনেকে আবার প্রিয় সহপাঠীকে পেয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মোবাইল ক্যামেরায় নিজেদের বন্দি করেন নতুন করে। কেউ কেউ খুঁজেছেন বিদ্যালয় মাঠসংলগ্ন সেই বিশাল খেলার মাঠের পাশে থাকা বড় বড় গাছগুলো। কেননা ওই গাছের ছায়াতলে সহপাঠীদের নিয়ে আড্ডা দেওয়ার সব স্মৃতিকথা ভিড় করে আছে যে মনের গভীরে। অনুষ্ঠানে শামিল হতে দেশ বিভিন্ন প্রান্তর থেকে ছুটে আসেন এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমরা সবাই উচ্ছ্বসিত।
আশা করি, এই ধরনের মিলনমেলা আমাদের ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করবে।আসুন, আমরা সবাই মিলে এই সুন্দর মুহূর্তগুলো উপভোগ করি এবং আগামীতে আবার একসঙ্গে মিলিত হওয়ার আশা রাখি।ভবিষ্যতে আমরা যেন আরও বড় পরিসরে এমন অয়োজন করতে পারি, সেই প্রত্যাশা রইল। এই অনুষ্ঠানটি আমাকে নতুন করে ফিরিয়ে নিয়ে গেল স্কুল জীবনে।#