রাজশাহী প্রতিনিধিঃ ৭মাসেও হদিশ মেলেনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)র চন্দ্রিমা থানা থেকে পৃথক দুইজন মৃত গৃহবধুর গায়েব হওয়া মোবাইল ফোনের একটিরও। এমনকি দীর্ঘ ৭মাসে মৃত গৃহবধুর থানা থেকে গায়েব হওয়া মোবাইল ফোন থেকে কে/কারা রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ আরএমপির বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে তাদের মৃত্যুর বিষয়ে চন্দ্রিমা থানার ওসি এমরান হোসেন ৩২লক্ষ টাকা নিয়ে মোবাইল বিনিময়ের কয়েকটি রহস্যময় এসএমএস খুদেবার্তা পাঠিয়েছেন তাকেও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর ভদ্রা জামালপুর মহল্লার মাজদার হোসেনের মেয়ে (২৬) বছরের মুর্শিদা খাতুন ৮ নভেম্বর ২০২৩ইং তারিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। সে সময়ে তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আশিকুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে মুর্শিদার হাতে লেখা একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে। তদন্তের প্রয়োজনে চন্দ্রিমা থানার সে সময়ের অফিসার ইনচার্জ ওসি এমরান হোসেন এর নির্দেশে মুর্শিদার স্মার্টফোনটিও জমা নেন এই তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আশিকুর রহমান।একইভাবে ১০নভেম্বর ২০২২ইং তারিখে রাজশাহী মহিলা কলেজের থার্ড ইয়ারের শিক্ষার্থী মোসা: সাদিয়া খাতুন(২৩) এর লাশ পাওয়া যায় চন্দ্রিমা থানাধিন শিরোইল কলনী এলাকার মো: গোলাম মোস্তফার ছেলে স্বামী মো: মোস্তাক এর বাসায় । সেখান থেকেও তদন্তের প্রয়োজনে মুর্শিদার মতো সাদিয়া খাতুনের স্মার্টফোনটিও জমা নেন সেই সময়ের চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি এমরান হোসেন। গত ৭মাস পেরিয়ে গেলেও এ দুইটি মোবাইলের কোন হদিস দিতে পারেনি চন্দ্রিমা থানা পুলিশ ও আরএমপির সাইবার ইউনিট।মুর্শিদার এক বান্ধবী জানান, ঘটনার দিন মুর্শিদার বাবার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি নেন চন্দ্রিমা থানার ওসি এমরান হোসেন। ওসি মুর্শিদার বাবাকে বলেছিলেন তদন্তের সময় আলামত হিসেবে মোবাইল ফোনটি কাজে লাগবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার কয়েক দিন পর মুর্শিদার বাবা মাজদার হোসেন তার মেয়ের ফোনটি ফেরত চেয়ে সে সময়ের চন্দ্রিমার ওসি এমরান হোসেন , তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আশিকুর রহমান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই প্লাবন কুমারকে মোবাইল ফোন দেন; কিন্তু এই তিন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে জানিয়ে দেন তাদের কাছে মুর্শিদার ফোন নেই। ফোনটি তারা খুঁজে দেখবেন। পেলে ফেরত দেওয়া হবে। মুর্শিদার বাবা তার মেয়ের ফোনটি ফেরত পেতে কয়েকবার চন্দ্রিমা থানা ও তালাইমারী ফাঁড়ীতেও যান। প্রতিবারই বলা হয়েছে- মোবাইল ফোন খুঁজে পেলে ডেকে নিয়ে ফেরত দেবেন বলে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।এরই মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে মুর্শিদা খাতুনের হারানো মোবাইল ফোন থেকে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ আরএমপির বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে কয়েকটি রহস্যময় এসএমএস যায়।সেই খুদেবার্তাগুলোতে বলা হয়, মুর্শিদা খাতুনকে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছিল। কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এজন্য দায়ী। এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ৩২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে চন্দ্রিমা থানার ওসির সঙ্গে। খুদেবার্তাগুলোতে ওসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগও করা হয়।আরও জানা যায়, এই খুদেবার্তাগুলো খোদ ওসির সরকারি মোবাইল ফোনেও যায়।সে সময় খুদেবার্তায় নিজের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেরে চন্দ্রিমার ওসি এমরান হোসেন কয়েকবারই মুর্শিদার বাবার বাড়িতে যান। মুর্শিদার মোবাইল ফোন থেকে কারা এসব বার্তা পাঠাচ্ছে- বিষয়টি তিনি জানতে চান।কিন্তু মুর্শিদার বাবা ওসিকে জানিয়ে দেন, ঘটনার দিন মোবাইল ফোন তো আপনিই নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। মুর্শিদার ফোনও তো আমরা ফেরত পাইনি।মুর্শিদার বাবার সঙ্গে কথা শেষে ওসি নিশ্চিত হন, মুর্শিদার মোবাইল ফোনটি থানায় দায়িত্বরত কোনো পুলিশ কর্মকর্তার কাছেই ছিল অথবা আছে। সেই অজ্ঞাত পুলিশ কর্মকর্তাকে শনাক্তে ওসি নানা উপায়ে চেষ্টা করেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি। শেষপর্যন্ত চাঞ্চল্যকর মুর্শিদার মোবাইল ফোন মিসিং ঘটনাটি তদন্তের জন্য আরএমপির সাইবার সেলে পাঠিয়েছেন আরএমপি কমিশনার। মুর্শিদার মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীকে শনাক্তেরও নির্দেশ দেওয়া হলেও তা ৭মাস পেরিয়ে গেলে তা সনাক্ত করতে পারেনি আরএমপির সাইবার ইউনিট।অন্যদিকে ১০নভেম্বর ২০২২ইং তারিখে রাজশাহী মহিলা কলেজের থার্ড ইয়ারের শিক্ষার্থী মোসা: সাদিয়া খাতুন(২৩) এর লাশ পাওয়া যায় চন্দ্রিমা থানাধিন শিরোইল কলনী এলাকার মো: গোলাম মোস্তফার ছেলে স্বামী মো: মোস্তাক এর বাসায়। এ সময় তদন্তের প্রয়োজনে মুর্শিদার মতো সাদিয়া খাতুনের স্মার্টফোনটিও জমা নেন সেই সময়ের চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি এমরান হোসেন। সে মোবাইল ফানটিরও কোন হদিস মেলেনি। তবে গতবছরের ১৪ডিসেম্বর রাত্রি ১০টা ২৪মিনিটে মুর্শিদার মতো সাদিয়া হত্যাকান্ডে ওসি এমরান হোসেন ৩২লক্ষ টাকার বিনিময়ে সাদিয়ার মোবাইল ফোনটি সাদিয়া হত্যামামলার আসামীদের দিয়েদেন বলে এসএমএস আসে মৃত সাদিয়ার ভুপাতো ভাই রবিউল ইসলামের মোবাইল নম্বরে। যে এসএমএসটি তিনি আরএমপি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের দিয়েছেন। মৃত সাদিয়ার ফুপাতো ভাই রবিউল ইসলাম বলেন , তাকে কয়েকদফা এই এসএমএসটি ডিলিট করার জন্য সে সময়ের তালাইমারী পুলিশ ফাাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আশিকুর রহমান,চন্দ্রিমা থানার এসআই ফারুকসহ পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা নগদ পাঁচ লক্ষ টাকার কথা বলেছিলেন। তাতে তিনি রাজি না হলে তাকে উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আরিফকে দিয়ে হয়রানী মুলক মামলা দেয়ার চেষ্টাও করা হয়। অবশেষে রবিউল ইসলামের আত্মীয়দের তদবীরে এক সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর এর টিকট ৫০,০০০/পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেরে দেয়া হয় বলে জানান তিনি। সাদিয়ার ফুপাতো ভাই রবিউল ইসলামকে হয়রানীমুলক ভাবে আটক ও এক কাউন্সিলর এর মাধ্যমে ৫০,০০০/টাকা নেয়ার বিষয়ে জিঙ্গাসা করলে তিনি রবিউলকে আটক করেছিলেন তবে টাকার বিনিময়ে না ওসি স্যারের নির্দেশে তাকে ছেরে দিয়েছি বলে জানান তিনি। বর্তমানে আরএমপির সাইবার সেলের ইনচার্জ সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার উৎপল চৌধুরী এ বিষয়ে কাজ করছেন। তবে উৎপল চৌধুরীর সঙ্গে বুধবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেন।এদিকে মুর্শিদা ও সাদিয়ার মোবাইল ফোনটি ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। অনেকের প্রশ্ন- মুর্শিদা ও সাদিয়ার মোবাইল ফোনে কী এমন ছিল, যা তার আত্মহত্যার পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। মোবাইল ফোন দুইটি মিসিং হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে গভীর রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। শেষপর্যন্ত মোবাইল ফোনটি খুঁজে পেতে মরিয়া ও খুদেবার্তা প্রেরণকারীকে শনাক্তে প্রাণপণ চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে সাইবার ইউনিট।এ বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানা থেকে এয়ারপোর্ট থানায় বদলি হওয়া ওসি এমরান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।বিষয়টি সম্পর্কে রাজশাহী মহানগর পুলিশ(আরএমপি)ও মিডিয়া উইং কর্মকর্তা বলেন, মুর্শিদার ফোন মিসিং ও সেই ফোন থেকে খুদেবার্তা পাঠানোর বিষয়টি আরএমপির সাইবার ইউনিট গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষ হলে ঘটনার বিষয়ে পুরোপুরি জানা যাবে। কে খুদেবার্তা পাঠিয়েছেন তাকেও শনাক্ত করা সম্ভব হবে। তবে এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে কথা বলার জন্য বলেন তিনি।#