By: Admin
Mar 13, 2023

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ যখন মন হতো পড়তাম, মন না হলে পড়া দরকার না- এমন মনে করতাম না। তবে পড়ালেখা যেটাই করতাম নিয়মিত করতাম, কোনো দিন ১৪ ঘণ্টা আবার কোনো দিন ২ ঘণ্টা এভাবে না। প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ ঘণ্টাই পড়ালেখা করেছি, এর থেকে বেশি পড়িনি।এভাবেই নিজের পড়াশোনার বিষয়ে জানাচ্ছিলেন মেডিকেলে সদ্য চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী আবুল খায়ের।গতকাল রোববার (১২ মার্চ) দুপুরে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। রেজাল্ট পরবর্তী দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি  এসব জানান।চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় আবুল খায়ের। পেশায় বাবা শিক্ষক ও মা গৃহিণী। বড় ভাই কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এর আগে ২০২০ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার রহনপুর তোজাম্মেল হোসেন একাডেমি থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে মাধ্যমিকের গন্ডিপেরোন আবুল খায়ের। এরপর থেকেই রাজশাহীতে ছাত্রবাসে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রাজশাহী সিটি কলেজ থেকে চলতি বছরে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ভর্তি পরীক্ষায় খায়েরের টেস্ট স্কোর ছিল ৭৩। আর মেরিট স্কোর দাঁড়ায় ২৭৩। মেধাতালিকায় ১২৭০তম হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। সুযোগ পেয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির।আবুল খায়ের বলেন, রোববার মেডিকেলের রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল আগে থেকেই জানতাম। দুপুর থেকেই অনলাইনে রেজাল্ট খুঁছিলাম। বড় ভাই ফোন করে বললো রেজাল্ট পাবলিশ হয়ে গেছে। তারপর মোবাইল নিয়ে অনলাইনে ঢুকতেই দেখলাম আমার রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হয়ে গেছে। আলহামদুলিলল্লাহ, অনেক ভালো লাগছে। আমার বাবা-মা ও মেসের ভাইয়েরা অনেক খুশি হয়েছেন। অনেকের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত উঠে আসতে পেরেছি, শুভ দিনটি এসেছে, সবাই শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।তিনি আরও বলেন, আমার আগে থেকেই ইচ্ছে ছিল মেডিকেলে প্রিপারেশন নেওয়ার। এইচএসসিতে ভর্তি হবার পরে লকডাউনে প্রায় পুরো সময়ই বাসায় ছিলাম। পরিচিত ভাইদের মাধ্যমে রেটিনার দাগানো বইগুলো কালেক্ট করি। সেই বইগুলো থেকেই মেডিকেলে প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করি। প্রশ্নব্যাংক যেগুলো ছিল হালকাপাতলা সলভ করার চেষ্টা করেছি। এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর রেটিনার রাজশাহী শাখায় ভর্তি হই। নিয়মিত ক্লাস টেস্ট ও অন্য পরীক্ষাগুলোতেও ভালো পজিশন এসেছিল।পড়াশোনার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতাম। এশার পরপর বা ১০টার মধ্যেই ঘুমিয়ে যেতাম। এরপর ফজরের দিকে উঠে পড়ালেখা শুরু করে দিতাম। ক্লান্ত হয়ে গেলে আধা ঘণ্টা বা ২০-২৫ মিনিট রেস্ট নিয়ে নিতাম, আবার পড়া শুরু করতাম। যখন মন হতো পড়তাম, মন না হলে পড়া দরকার মনে করতাম না। তবে পড়ালেখা যেটাই করতাম নিয়মিত করতাম, কোনো দিন ১৪ ঘণ্টা আবার কোনো দিন ২ ঘণ্টা এভাবে না। প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ ঘণ্টাই পড়ালেখা করেছি, এর থেকে বেশি পড়িনি। বেশি পড়লে অনেক ক্লান্ত হয়ে যেতাম, মাথায় কিছু ঢুকতো না।ভবিষ্যৎ ইচ্ছা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বাবা-মা আগে থেকেই চাইতো আমি যেন মেডিকেলে চান্স পাই। আমার ভাইও বলতো মেডিকেলে চান্স পাওয়া লাগবে। আমার নিজেরও ইচ্ছে ছিল মেডিকেলে পড়ার, সেজন্য মেডিকেলই টার্গেট হয়। ইতোমধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চান্স হয়েছে, আমি এখানেই স্থায়ীভাবে থাকতে চাই। পড়া শেষ করে চিকিৎসক হয়ে মানুষের উপকার করতে চাই। আমার বাবা চান আমি যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করি।মেডিকেলে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে একটাই কথা বলবো, এখানে পরিশ্রম লাগবে ৭০ শতাংশ। আর বাকি ৩০ শতাংশ আল্লাহর উপর ছেড়ে দিতে হবে। পরিশ্রমও যেমন লাগে, ভাগ্যও তেমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন তিনি।এ বিষয়ে তার রুমমেট মাহমুদুর রহমান বলেন, সে কোনো সময় নষ্ট করতো না। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিনই শেষ করতো। কারো রুমে গিয়েও গল্প-আড্ডা দিতো না। আশা করি, আগামীতে সে আরও ভালো কিছু করবে।আবুল খায়েরের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলের এ খবরে আমরা অনেক আনন্দিত। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আল্লাহ তাকে ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করে মানুষের চিকিৎসা করার তাওফিক দিক সেই দোয়াই করি।রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ আমিনা আবেদীন বলেন, আবুল খায়েরসহ যারাই এ বছর মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে সবাইকে শুভেচ্ছা। তাদের সফলতার খবরে আমরাও উচ্ছ্বসিত। তাদের জন্য শুভ কামনা। পড়াশোনা শেষ করে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করবে এই প্রত্যাশাও করেন তিনি।#


Create Account



Log In Your Account