এম.এস.আই শরীফ ,ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধিঃবাঙ্গালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে “আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার” এই শ্লোগানকে কেন্দ্র করে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন, যার জমি আছে ঘর নেই তথা (ক) শ্রেণীর পরিবারের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বাসস্থান নির্মাণ করা হয়। ভোলাহাট উপজেলায় উল্লিখিত পরিবারগুলি বাড়ী পাবার পর মুক্তবিহঙ্গের মতো প্রশান্তিতে বসবাস করছে। বর্তমানে উপজেলাটি ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হিসেবে তালিকায় রয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলা। এ ব্যাপারে গতকাল ২০ মার্চ ২০২৩ সোমবার বিকেল ৪টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবাসসুম তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোঃ কাউছার আলম সরকার, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ তৌফিকুল ইসলাম, ভোলাহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি এম.জি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ্ কবির, সাংগঠনিক সম্পাক ও সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ শরিফুল ইসলাম শরীফ, সাংবাদিক হায়দার আলী, বি.এম রুবেল আহমেদ, জামিল হোসেনসহ অন্যরা। প্রেস ব্রিফিং এ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবাসসুম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী যাহা বর্তমান লক্ষèীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগোছা গ্রামে অসহায় গৃহহীন ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিনে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য প্রকল্পের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার গরীব-দুঃখী, নিরন্ন মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে অন্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ মৌলিক বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তাগিদ করেন। আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার, এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশে একজন মানুষও গ্রহহীণ থাকবে না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সকল ভূমিহহীন ও গ্রহহীনের জন্য নীতিমালা ২০২০ তৈরী করেন। তারই আলোকে উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি কর্তৃক উপকারভোগী ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার প্রদাণ করে ২(দুই) শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত ব্যবস্থা পূর্বক কার্যক্রম শুরু করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় সারাদেশের ন্যায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১ম পর্যায়ে ১ম ধাপে-৭টি, ১ম পর্যায়ে ২য় ধাপে-১৫০টি, ১ম পর্যায়ে ২য় ধাপে ব্যক্তিগত-৩টি, ২য় পর্যায়ে ১ম ধাপে-৪০০টি, ২য় পর্যায়ে ২য় ধাপে-৪১১টি, ৩য় পর্যায়ে-১৫০টি, উপজেলা রাজস্ব খাত হতে-১টি। এ পর্যন্ত সর্বমোট বাড়ী তৈরীর পরিমাণ সরকারী বরাদ্দ খাত-১১১৮টি, ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগ-৩টি, উপজেলা রাজস্ব খাত-১টি, মোট-১১২২টি। প্রায় ৬৬টি স্পটে ১ম, ২য় ও ৩য় পর্যায়ে মোট-১১২২টি গৃহের কাজ ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মার্চ মাসে নির্মাণ ও হস্তান্তরযোগ্য কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। বর্তমানে ভোলাহাট উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যগণ ভূমিহীন ও গ্রহহীন উপকারভোগীর তালিকা যাচাই বাছাই করে গত ২৯/১১/২০২২ খ্রি. সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ কর্তৃক ভূমিহীণ ও গৃহহীণ পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তীতে যদি কোন ভূমিহীন ও গৃহহীন পাওয়া যায় তাহলে প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে সকল ইউপি চেয়ারম্যান একমত পোষণ করেন যে ভোলাহাট উপজেলাকে বর্তমান সময়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা যেতে পারে বলে ব্রিফিং এ উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্রটি আরো বলছে, এই ভোলাহাট উপজেলার ১ হাজার ১’শ ২২ জন অসহায়, ভূমিহীন, গৃহহীন, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ রাস্তার ধারে, খাস জমিতে, খোলা আকাশে নীচে কিংবা পরের জমিতে বসবাস করার আর প্রয়োজন হবে না। আজ উল্লেখিত পরিমানের পরিবারের লোকেরা নিজের আপন ঠিকানায় বসবাস করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা গড়তে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় গণমাধ্যমসহ জনগণ। উপজেলা প্রশাসন সকলের সহযোগিতায় যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন প্রকৃত অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাছাই করে বাড়ী দেয়ার প্রকল্পটির কার্যক্রম। সরজমিন প্রত্যক্ষ করা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরধরমপুরের মুজিবপল্লীর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ কয়েশ উদ্দিন বলেন, আমার নিজস্ব জমি না থাকায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে এখানে বাড়ী উপহার দিয়েছেন। আমি অত্যন্ত মনেপ্রাণে খুশী হয়েছি। এখানে ১০০’শ পরিবার বসবাস করি। এরা সবাই গৃহহীন এবং ভূমিহীন ছিল। যেখানে-সেখানে রাস্তার ধারে খাস জমিতে বসবাস করতো। এখন সবাই নিজস্ব ঠিকানা পেয়ে খুব খুশী। তাঁরা হাঁসমুরগী, গরু-বাছুর, সবজি চাষ করে বেশ ভালো মত জীবন যাপন করছে। এখানে মাননীয় শেখ হাসিনা সরকারের ও উপজেলা প্রশাসনের অফিসারের মাধ্যমে তৈরী হয়েছে, খেলার মাঠ, মসজিদ, পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, স্কুল সব কিছুই করে দিয়েছেন। কোন কিছুরই কমতি নেই। অরণ্যের মত ছিলো এই জায়গাটি। বর্তমানে এর মনোরম পরিবশে দেখতে খুব সুন্দর, তাই অনেক মানুষ ইচ্ছে করেই দেখতে আসেন এই মুজিবপল্লী নামীয় ছোট্ট আশ্রয়ণের বাড়ীগুলি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা তাই এর নামটাও দিয়েছেন মুজিবপল্লী। উপজেলার ২নং গোহালবাড়ী ইউনিয়নের কুলিপুকুরে গিয়ে দেখা যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধি মোঃ নাজমুল হোসেন বলেন, এতোদিন আমি খুব অবহেলিত ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মত প্রতিবন্ধিকে মনে রেখে উপহার হিসেবে যে বাড়ী দিয়েছেন এতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমি আজীবিন দোয়া করবো। বাড়ী পেয়ে বেশ সুখে-শান্তিতে বসবাস করছি বলে জানায় নাজমুল। অপরদিকে, উপজেলা সংলগ্ন পূর্বে হলদেগাছী গ্রামের মোসাঃ মোমেনা খাতুন বলেন, আমি স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে রাস্তার পাশে খাস জমিতে বসবাস করছিলাম। পরে অন্যত্র উপজেলার একজনের সাথে বিয়ে হয়। সে বিয়ে করার পর আমার প্রতি খেয়াল রাখতো না। খুব অসহায় ভাবে জীবনযাপন করছিলাম। এমন সময় বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়ী উপহার পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাই টুকুন হয়েছে। আমি কোনদিন জমি কিনে বাড়ী করতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রাণভরে দোয়া করি, আল্লাহ্ যেনো তার নেক হায়াত দান করেন বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে ভোলাহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোঃ কাউছার আলম সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘরগুলো উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিবিড়ভাবে তদারকী করেছেন যাতে গুণগত মান সঠিক থাকে। সেই সাথে বাড়ী পেয়েছেন যারা, তাদের সার্বিক দিক চিন্তা-ভাবনা করে চলাচলের জন্য রাস্তা, নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ, ছোট ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার জন্য ছোট করে হলেও স্কুল-মক্তব, খেলাধুলার মাঠ বিভিন্ন মৌলিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা-তদবীর করেছি, যেনো তাঁরা স্বল্প পরিসরে হলেও সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে। এ ছাড়াও ভোলাহাট উপজেলার ২নং গোহালবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত ‘তালপল্লী’ নামকস্থানটিকে সকলস্তরের মানুষের জন্য মুক্ত আকাশের নীচে একটু প্রশান্তি আর ভ্রমণের একটি সুন্দর নীবিড় বিশেষ ব্যবস্থা ও ল্যাট্রিন তৈরী করা হয়েছে। যা এলাকার জন্য একটি মিনি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বলে পরিলক্ষিত হয়েছে বলে তিনি জানান। বর্তমান সরকারের দেয়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের বাড়ী সস্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবসসুম বলেন, ভোলাহাট উপজেলায় কয়েক ধাপে ১ হাজার ১শ ২২টি বাড়ী খুব স্বচ্ছভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষেরা স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছেন। তাঁরা নিজ ঠিকানা পেয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি আরো বলেন আগামী ২২ মার্চ ২০২৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রী ভোলাহাট উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণার তালিকায় রেখেছেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।#