By: Admin
Oct 8, 2023

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদীতে কমছে পানি। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তীব্র ভাঙ্গন। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে প্রায় ৬ কিলোমিটারের বেশি এলাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এখনো হুমকির মুখে সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ভাঙ্গনরোধে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নেই তেমন কোন তৎপরতা। জানা যায়,চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বান্না পাড়া, চটক পাড়া, সর্দার পাড়া, ঘোষ পাড়ার দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙ্গন চলছে। এতে প্রায় ১০০ টির বেশি বাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে। এতে সর্বস্বান্ত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। হঠাৎ ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় অনেক মানুষের জিনিসপত্র নদীতে তলিয়ে গেছে। আর হুমকিতে আছে নারায়ণপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, সাইক্লোন কেন্দ্র, চরনারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।এদিকে নারায়ণপুর ইউনিয়নের ধুলাউড়ি এলাকা থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের দশরশিয়া প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। এতে মাষকলাই ও  বিভিন্ন সবজিসহ প্রায় ২০০ বিঘা ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।এতে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।এখানেও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন মানুষ।নারায়ণপুর ইউনিয়নের বান্নাপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ উদাহরণ দিয়ে বলেন, শুনেছি কিয়ামতের মাঠে নাকি কেউ অন্য কারো দিকে চোখ তুলে তাকাবে না। গত কয়েকদিন থেকে আমাদের অবস্থাও এমন হয়েছিল। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। আমাদের সব শেষ আর কিছু বাকী নাই। আমার প্রায় ৩০ বিঘা জমি এখন পানির নিচে। আর বাড়ি তো তলিয়ে গেছেই। আমি সংশ্লিট কারও কাছে গিয়েও আশ্রয় পাইনি।এদিকে পদ্মার ভাঙ্গন আতঙ্কে নারায়ণপুর দারুল হুদা আলিম মাদরাসা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে। মাদরাসার প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে মাদরাসাটি স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ আছে।বান্নাপাড়া গ্রামের মেহেদি হাসান বলেন, দুদিন আগে আমাদের বাড়িতে হঠাৎ ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ সময় সব জিনিসপত্র সরাতে গিয়ে আমাদের ১০/১২ মণের বেশি ধান নদীতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আমাদের বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আমরা কাউকে পাশে পাইনি। বান্নাপাড়ার বাসিন্দা সাবেক মেম্বার এনামুল হক পাতান বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বাড়লে এবং কমলে নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। টানা ভারী বর্ষণ আর বর্তমানে উজানের ঢলের তোড়ে নদী ভাঙ্গন হচ্ছে। প্রতিবছরই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু স্থায়ী কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এতে ভোগান্তিতে পড়ে এলাকার হাজারো মানুষ।এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুদ আলী বলেন, পদ্মা নদীর পাশেই আমার বাড়ি এখন পর্যন্ত ছয় বার সরানো হলো। শিবগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর ও মনাকষা ইউনিয়নের দোভাগী,মনোহরপুর,গাঁয়পাড়া,খাকচ্ছাপাড়া,আউববিশ্বাসেরটোলা একই অবস্থা। কিন্তু কোন রেহাই নেই অনবরত ভেঙ্গেই যাচ্ছে। এতে আমার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।রেহেনা বেগম নামে এক নারী বলেন, কতবার বাড়ি সরানো যায়? আর পারছি না বাবা। প্রতিবছর আমাদের এ অবস্থা হয়। গরু-ছাগল নিয়ে খুব বিপদে আছি।নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বেনজির আহম্মেদ বলেন, যত পানি কমছে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙ্গন। ইউনিয়নের মানুষ খুবই কষ্টে আছে। ভাঙ্গনের ভয়ে রাতে তারা ঘুমাতেও পারচ্ছে না। কারণ হঠাৎ ধসে যাচ্ছে বড় বড় এলাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শত  শত মানুষ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোখলেছুর রহমান বলেন, এর আগে নারায়ণপুর ইউনিয়ন ৩০ লাখ টাকার কাজ আমরা করেছিলাম। কিন্তু সেগুলো ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে। আর আমরা ৯ কোটি ২০ লাখ টাকার আবেদন অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখনো অনুমোদন হয়নি। তাই নদীর ভাঙ্গন ঠেকাতে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। ভাঙ্গনের খবর সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তাৎক্ষণিক অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে ভাঙ্গন ঠেকানো অসম্ভব। অন্তত ২৫ কোটি টাকার কাজ করলে এই ভাঙ্গন থামানো যেতে পারে।#


Create Account



Log In Your Account