চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় যে সমস্ত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে সেগুলোর পরিচালনা পদ্ধতি, চিকিৎসা সেবা, পরিবেশ নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করে অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর বেশীরভাগই হচ্ছে অদক্ষ লোকজন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিশেষ করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো একেবারেই অভিজ্ঞতাবিহীন কিংবা টেকনোলজিস ছাড়াই রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকে। ফলে সঠিক ফল না পেয়ে অনেক রোগীকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।গোমস্তাপুর উপজেলায় মোট ২৭ টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। তন্মধ্যে অনেকগুলোর কোন নিবন্ধন নেই। অনেকের লাইসেন্স নবায়ন করা নেই। আবার অনেকেই লাইসেন্সবিহীন অবস্থায় আছে। ইদানীং আরো ২ টি নতুন ক্লিনিক চালুর অপেক্ষায়।এছাড়া এ সমস্ত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর বিপক্ষে রয়েছে জোরকরে রোগী নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ। জড়িতদের কার্যকলাপ সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেমন কোন রোগী তার চিকিৎসার জন্য গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ গেলে যদি কোন ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করতে দেন তবে সেসময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ উপস্থিত থাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজন রোগীকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কিংবা একপ্রকার জোর করেই তাদের সেন্টারে এনে পরীক্ষা করায়। তাছাড়া এ সব ক্ষেত্রে হাসপাতালের ডাক্তার ও স্বাস্থ্য সহকারী গণ তাদের পছন্দের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের পরীক্ষার জন্য যেতে বলেন। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে নানা মুখরোচক কথাও এলাকায় ভেসে বেড়ায়। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা কাজের সন্ধানে ক্লিনিকগুলোয় এলে তাদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ক্লিনিক মালিক ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মানুষের লোলুপ দৃষ্টি তাদের উপর পড়ে। পেটের তাগিদে অনেকেই তাদের আহŸানে সাড়া দিয়ে ক্লিনিকের কাজে যোগ দেয়। এ ক্ষেত্রে ঐসব মেয়েদের কাজের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন পড়ে না। তবে পাপ কখনও চাপা থাকে না এই কথাটি বাস্তবতায় রুপ নেয় যখন কোন অনৈতিক কর্মকান্ডের খবর জনসম্মুখে এসে যায়। তেমনি রহনপুর আলমদিনা ক্লিনিকের কর্নধার আমিনুল ইসলাম জনির সাথে তারই কোন এক নারী স্টাফের একসময়ের কামলীলার ভিডিও স¤প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এ ভিডিও ক্লিপ এখন অনেকের কাছে রয়েছে। অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ কতিপয় ক্লিনিক মালিক ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রয়েছে। তাছাড়া এসব ক্লিনিকে বাহির থেকে যে সমস্ত ডাক্তাররা আসেন তাদের মনোরঞ্জন করতে ক্লিনিকের মেয়েদের ব্যবহার করা হয়। কোন মেয়ে রাজী না হলে কৌশলে তাকে বø্যাকমেইলিং করা হয়। এছাড়াও অসামাজিক কার্যকলাপ ও ফৌজদারি অপরাধসহ আরো অনেক কিছু এই ক্লিনিকগুলোর নিত্যদিনের কাজ।চিকিৎসা সেবা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। ভুল চিকিৎসা, ভুল ডায়াগনস্টিক ও ভুল অপারেশন এর বিস্তর অভিযোগ আছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর বিপক্ষে। ইতিপূর্বে অনেক ঘটনায় আছে যা সবার জানা। বিশেষ করে প্রসুতি অনেক মা তাদের জীবন দিয়েছে, অনাগত শিশুও পৃথিবীর আলো দেখেনি অদক্ষ লোকদের কর্মকাÐে। কিন্তু এত কিছুর পরেও তারা অদৃশ্য হাতের কারসাজিতে পার পেয়ে যায়। কোন না কোনভাবে ভুক্তভোগীদের ম্যানেজ করে সমস্যা মিটিয়ে নেয়। ফলে তারা আইনের ফাঁক ফোকর থেকে নিজেদের মুক্ত করে নিতে পারে। এছাড়াও রয়েছে অবৈধ গর্ভপাতের অভিযোগ। প্রায় সব ক্লিনিকে এই কাজ করা হয়। এমনকি নিরাপত্তার জন্য ক্লিনিক সংশ্লিষ্টদের বাসায় চলে এই গর্ভপাত। গোমস্তাপুর উপজেলা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি ডাঃ মোজাম্মেল হক জানান, ক্লিনিকের কেউ কোন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ঐ ক্লিনিকেরই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এখানে সমিতির কিছু করার নেই। গোমস্তাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান বলেন, কোন অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল হামিদের সাথে। তিনি বলেন, অনিবন্ধিত ক্লিনিক থেকে থাকলে তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিভিন্ন অনিয়মের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যব¯হা গ্রহণ করা হবে। সিভিল সার্জন ডাঃ এস এম মাহমুদুর রশিদ বলেন, প্রায় সকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর নিবন্ধন আছে। যে কয়েকটার নেই খুব দ্রুত তাদেরকে নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য নোটিশ করা হবে। এছাড়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর বিপক্ষে অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রশাসনের সহায়তায় দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ব্যবস্থা নিব।#