By: Admin
Dec 25, 2023

নীলফামারী প্রতিনিধি:প্রতিবছর তিস্তার আগ্রাসনে উত্তরে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলছে। বর্ষায় ভাঙন আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ভয়াবহ মরুকরণের মুখে পুরো তিস্তা অববাহিকা। ভেঙ্গে পড়েছে তিস্তা নির্ভর জীবন জীবিকা। এমন পরিস্থিতিতে উত্তরের কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে আগামীকাল ২৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রীর রংপুর সফরে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে এমন প্রত্যাশা তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাদের। উত্তরের ৫ জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের দুই কোটি মানুষ সরাসরি তিস্তার ওপর নির্ভরশীল। দেশের শতকরা ৮ শতাংশ মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্ভর করছে তিস্তার ওপর। চার দশকে ১১৫ কিলোমিটার তিস্তা পরিচর্যার অভাবে নানা দিকে গতি পরিবর্তন করে এখন অনেকটা দিশেহারা। ভাঙ্গনের তাণ্ডবে তিস্তা গর্ভে বিলীন হচ্ছে একের পর এক গ্রাম। গেল ১০ বছরে শুধু বসত ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন উত্তরের ৩ লাখ পরিবার।নীলফামারীর ডিমলার ছোটখাতা গ্রামের বাসিন্দা ওমর আলী। প্রায় ৭ বছরে তিন বার ভাঙতে হয়েছে তার বসতভিটা। প্রথম ভিটা কেনা হলেও পরে ঘর বাঁধতে হয়েছে অন্যের জমিতে। ওমর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিজের কেনা বাড়িভিটা নদীতে চলে গেছে, এখন মানুষের জমিতে থাকি। আমি খুব কষ্টে ৫ শতক জমি কিনেছিলাম। সেখানে আর বাড়ি করা হয়নি। এখন যে মানুষের জমিতে থাকি এখানেও নদী চলে আসছে ঘরের কাছে। আবারও বাড়ি ভাঙ্গলে আর যাওয়ার জায়গা নেই।ওমর আলীর মতো প্রায় একই অবস্থা ওই এলাকার প্রায় ৫০০ পরিবারের। তিস্তায় চোখের সামনেই সর্বস্ব হারিয়ে কোনোরকম টিকে আছেন তারা। নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে পরিবারগুলোর বসতভিটা, আবাদি জমিসহ জীবিকা নির্বাহের নানা উপকরণ।ডিমলার খালিশা চাঁপানী কেল্লাপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মকছেদ আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত ২০ বছরে ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বসত বাড়ি পরিবর্তন করেছেন বেশ কয়েকবার। ১০ বিঘা আবাদি জমির এখন অবশিষ্ট নেই কিছুই। তিনি বলেন, বাপের দেওয়া যে কয়েক বিঘা আবাদি জমি পাইছি। সব শেষ নদীভাঙনে। সব হারিয়ে কোনোরকমে জীবন চলছে, যা যাওয়ার সব নদীতে চলে গেছে।মকছেদের মতো তিস্তা পাড়ের অনেক বাসিন্দাই জানালেন বছরের পর বছর সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হলেও শুধু ত্রাণ সহায়তা ছাড়া আর কিছুই মিলেনি। তবে ত্রাণ নয়, তিস্তার শাসন চান তারা।চলতি বছরের ২ আগস্ট রংপুর সফরে এসে প্রধানমন্ত্রীর তিস্তা মহাপরিকল্পনার ঘোষণা আশা জাগায়। আর ২১ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে পাঁচ জেলার সঙ্গে নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি আবারও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলেন। ফলে নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। তবে ২৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর রংপুর সফরে চূড়ান্ত ঘোষণা চান তারা।নদী পাড়ের বাসিন্দারা বলেন, ক্ষমতায় এলে শেখ হাসিনা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন এই ঘোষণা আমরা চাই না। উনি দিনক্ষণ উল্লেখ করে বলুক এটা বাস্তবায়ন হবে।ডিমলার খালিশা চাঁপানী কেল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর রংপুর সফরে আশায় বুক বেঁধেছি, এবার তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন। এতে করে আমাদের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।একই এলাকার হাকিম মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন তাহলে উত্তরের মানুষের চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হবে। আশা করি উনি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়ে যাবেন।তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানসহ উত্তরের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সুফল আসবে। এর ফলে নদী পথের যোগাযোগ তৈরি হবে। স্যাটেলাইট শহর হবে, আবাদি জমি বাড়বে। ফলে ফলে মানুষের জীবন মানে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে।বর্ষায় ভাঙন, প্লাবন এখন দীর্ঘ দুর্যোগে রূপ নিয়েছে আর শুষ্ক মৌসুমে বন্ধু দেশ ভারতের পানি প্রত্যাহারে মরতে বসেছে তিস্তা। সে কারণে ২ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের রংপুরের পীরগঞ্জের জনসভায় আবারও প্রধানমন্ত্রীর তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন এমন প্রত্যাশা উত্তরের লাখো কোটি মানুষের।# 


Create Account



Log In Your Account