চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে শেষ মুহূর্তে আমের বাজার জমজমাট। হঠাৎ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আ¤্রপালি আমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফজলি আমের দর কমেছে। ফলে ফজলি আমের চাষাবাদ করা বাগানিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। আম ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিষ্টতা ও অন্যান্য গুণাবলি থাকায় আ¤্রপালির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। একই সময়ে বাজারে আসায় পড়ে গেছে ফজলি আমের দাম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রচলিত আমবাগানে ফজলি আমের আবাদ প্রায় ১৫ শতাংশ। দেশের বৃহত্তম আমবাজার কানসাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে বারি-৪, আ¤্রপালি, ফজলি, আশ্চিনা ও গৌড়মতি বিক্রি হচ্ছে ৫ রকমের আম। বারি-৪ ২৬০০, আ¤্রপালি ৩০০০, ফজলি ২৫০০, আশ্চিনা ৮০০ ও গৌড়মতি ২৭শো টাকা। বাজারে ফজলির দাম থেকে আ¤্রপালি দামই বেশি। বাজারে প্রতিমণ ফজলি বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে ২৫শো টাকা দরে। অন্যদিকে আ¤্রপালি বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩২০০শো টাকায়।মানুষ ফজলি আমের চেয়ে আ¤্রপালি আম খেতে বেশি পছন্দ করছেন।ফলে আ¤্রপালি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফজলি আমের দাম কমে গেছে। তিনি জানান, বর্তমান বাজারে ফজলি আমের দাম রকমভেদে ২৪শো টাকা ২৭শো টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ফুড ব্যাগিং করা ফজলি আমের মণ ৩ হাজার টাকা। কানসাট-শ্যামপুর এলাকার আশরাফ নামে এক আম ব্যবসায়ী জানান, আম বাজারে ফজলি ও আ¤্রপালি আম একসাথে বাজারে নামার কারণে দাম কমেছে। দিনদিন ফজলি আমের চাহিদা কম থাকার ফলে লোকসান হওয়ায় চাষিরা গাছ কেটে ফেলছেন। তিনি জানান, বর্তমান বাজারে আ¤্রপালির প্রতিমণ আম রকমভেদে ৩ হাজার থেকে প্রায় ৩ হাজার ২শত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চকর্কীতি ইউনিয়নের চক নাধরা গ্রামের আম ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, আগে শেষ সময়ে ফজলি দিয়ে ব্যবসা করেছি এখন আ¤্রপালি করতে হচ্ছে। ফজলির জায়গাটা দখল করছে আ¤্রপালি।বিশিষ্ট আম ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ইসমাইল হোসেন শামীম খান বলেন, ‘পুরান বাগান ও পুরান জাতের আম উৎপাদন করায় শিবগঞ্জের হাজার হাজার চাষি লাভবান হতে পারছে না। আধুনিক বাগান ও আধুনিক জাতের আম ছাড়া ব্যবসায়ী ও চাষিরা লাভবান হতে পারছেন না। যারা আধুনিক বাগান তৈরি করে আধুনিক আম উৎপাদন করেছে তারাই লাভবান হচ্ছে।চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিকের দাবি, বাগানের গাছে এখনও ৭০ শতাংশ ফজলি আম ঝুলছে। তিনি বলেন, ফজলি আমের চাহিদা কমে যাওয়ায় লোকসান গুনছে দীর্ঘদিন থেকে চাষি ও বাগান মালিকরা। যতদিন না ফজলি আমের প্রসেসিং করে বাই প্রডাক্ট (আচার, আমসত্ত্ জাতীয় খাবার) হবে ততোদিন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্নস্থানে এখন আম চাষাবাদ হচ্ছে। এখনও চাঁপাইনবাবগঞ্জের উৎপাদিত আম দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশি দামে বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্নস্থানে আমের হাট থাকায় সেসব হাটে ব্যাপারীদের আনাগোনা বাড়ছে একই সাথে কানসাট আমবাজারে কমছে। ফলে ফজলি আমের চাহিদা কমেছে, চাষিরাও কম দামে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।তিনি আরও বলেন, ফজলি আমের দাম বৃদ্ধি করতে বিশ্ববাজারে আম রপ্তানিতে ব্যাপক জোর দিচ্ছে জেলা কৃষি বিপণনের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে কয়েকজন আম রপ্তানিকারকদের সাথে এসব বিষয়ে কথা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগির বিদেশের বাজারে রপ্তানি হবে ফজলি আম।চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, আ¤্রপালি আমের গুণগত মান এবং মিষ্টতার কারণে এর চাহিদা প্রচুর। বাগান থেকেই আম বিক্রি করা যাচ্ছে। ঘন আম বাগানগুলোতে আ¤্রপালি আমের চাষ বেড়েছে।তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে ফজলি আমের চাষাবাদ হচ্ছে। এতে গাছ রয়েছে ৬ লাখ ১৩ হাজার ৭৩৫ টি। অন্যদিকে জেলায় দুই হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ১০৫ টি গাছে আ¤্রপালি চাষাবাদ হচ্ছে। এবার জেলায় ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আম চাষাবাদ হচ্ছে। চলতি বছর আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।#