চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃউপবৃত্তির পুরো টাকাই বানভাসীদের দিল পোল্লাডাঙ্গা স্কুলের শিক্ষার্থী তাসফিয়া।চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শংকরবাটী পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিয়া হাসান।বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সহায়তা করতে অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।মায়ের কাছে জমা থাকা তার ছয় মাসের উপবৃত্তি পাওয়া ৯২০ টাকার সবগুলো টাকাই বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য তুলে দিয়েছে।শিশুর এমন ভালোবাসা ও সহমর্মিতা মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ। তাঁর মায়ের অনুমতি নিয়ে ওই টাকা তুলে দিয়েছে বন্ধুসভার সদস্যদের হাতে।খুদে ছাত্রী তাসফিয়া বলেন, 'টিভিতে বন্যার খবরে দেখি মানুষের কষ্ট। সেখানে শিশুদেরও দেখে মনে খুব কষ্ট লাগে । তাই উপবৃত্তির সব টাকা দিয়েছি'।দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি খারাপ হবার পর দুর্গত মানুষদের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্ধুসভার সদস্যরা টাকা সংগ্রহ করছে। মঙ্গলবার টাকা তুলতে যায় শংকরবাটী পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।এ বিদ্যালয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের জন্য রয়েছে বড় একটি মাটির ব্যাংক। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এখানে জমা করে তারা। নাম রাখা হয়েছে 'সঞ্চয় ব্যাংক'। এ ব্যাংকে জমানো টাকা থেকে সহপাঠী, সহপাঠীর বাবা-মা বা এলাকার দুস্থ মানুষের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। এবার বন্যার্তদের জন্য গঠিত প্রথম আলো ট্রাস্টের জন্য ত্রাণ তহবিলের জন্য মাটির ব্যাংকটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সদস্যদের হাতে তুলে দেয়া হয়।দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাত থেকে মাটির ব্যাংকটি গ্রহণ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার মাশরুফা খাতুন, মোঃ মঈন ও আল মাহমুদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা খাতুন, সহকারী শিক্ষাক যোবেদা খাতুন, ফারজানা ইয়াসমিন, সাবিহা আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন প্রমূখ।মনোয়ারা খাতুন জানান, মাটির ব্যাংক থেকে কিছুদিন আগে এক শিক্ষার্থীর বাবাকে চিকিৎসার জন্য সাড়ে ১৩ হাজার টাকা সহয়তা দেয়া হয়। ব্যাংকে বেশি জমা ছিল না । রোববার সবাইকে বলা হয় বাড়ি থেকে টাকা আনতে। তৃতীয় শ্রেণির তাসফিয়া হাসান উপবৃত্তির পাওয়া ৯২০ টাকা নিয়ে এসে দেয় । মা-বাবার অনুমতি নিয়ে দিল কিনা জানতে মাকে জিজ্ঞেস করি। মা জানায়, তাসফিয়া বাড়িতে এস বলে বন্যার্তদের সাহায্য করতে চায় । তাকে ১০০ টাকা দিই । সে বলে 'এত অল্প টাকা আমি দিতে চাই না । উপবৃত্তির ছয়মাসের সব টাকাই দিতে চাই' । তাকে সব টাকায় দিয়ে দিই । মেয়ে আমার মানবিক মানুষ হতে শিখেছে জেনে মনে খুব আনন্দ হয় বলে জানায় তাসফিয়ার মা।প্রধান শিক্ষক বলেন, টিফিনের সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে সঞ্চয়ের অভ্যাস ও ওই টাকা দিয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মনোভাব তৈরির জন্য বিদ্যালয়ে মাটির ব্যাংক চালু করা হয় ২০১৮ সালে । এবার বন্যার্তদের জন্য দেওয়া হলো ১০ হাজার টাকা । এর মধ্যে শিক্ষকদের চার হাজার টাকা রয়েছে। ২০২২ সালে সিলেটের বন্যার্তদের জন্য মাটির ব্যাংক থেকে প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রান তহবিলে সহায়তা দেওয়া হয়। এ নিয়ে পাঁচ বারের মত দুস্থ মানুষকে সহায়তা দেওয়া হলো মাটির ব্যাংক থেকে।#